. ঈশ্বরীয় জীবনে কি কি
. নিয়ম শৃঙ্খলা থাকে?
. ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
*১) অমৃতবেলায় স্মরণের যাত্রা :
অমৃতবেলায় ৪-টে থেকে ৪:৪৫ অবধি-বাবাকে ভালবেসে তাঁকে স্মরণ করার অভ্যাস করা খুবই প্রয়োজন। সর্ব প্রথমে ঘুম থেকে উঠেই বাবাকে সুপ্রভাত জানাবে।
*২) নিয়মিত প্রাতঃমুরলী শুনবে :
বাবা বলেন, বাচ্চারা তোমরা জ্ঞান মূরলী (শিববাবার মহাবাক্য) কখনও মিস্ করবে না। মুরলীই হলো তোমাদের প্রকৃত পাঠ এবং তোমাদের পুরুষার্থ করানোর শ্রেষ্ঠতম শ্রীমৎ। মুরলী আত্মার মন ও বুদ্ধির অতি প্রয়োজনীয় ভোজন বা খোরাক।
*৩) ব্রহ্মচর্যের পালন :*
শিববাবা বলেন, ''মিষ্টি বাচ্চারা, ব্রহ্মচর্যের বলের দ্বারা বুদ্ধিকে শুদ্ধ বানাতে হবে, যা যোগযুক্ত হবার সহায়ক। তাই এই সঙ্গমযুগে মন, বচন, কর্ম, দৃষ্টি, বৃত্তি, সম্বন্ধ-সম্পর্কে সর্বদা পবিত্র ও রাজযোগী হতে হবে।
*৪) অন্ন শুদ্ধি :*
যেমন অন্ন তেমন মনের স্থিতি। যোগযুক্ত হাতের বানানো সাত্ত্বিক শাকাহারী (নিরামিষ) শুদ্ধ ভোজনই গ্রহণ করতে হবে। ভোজনের সময় অবশ্যই বাবার স্মরণে থাকবে। এমন যেন না হয় যে, কোনও আত্মা পরমাত্মার স্মরণে থেকে ভোজন বানিয়ে তা পরিবেশন করছে অথচ আমরা কথা বলতে বলতে সেই ভোজন খাচ্ছি -এমনটা হওয়া উচিত নয়। ভোজন অবশ্যই যোগযুক্ত হয়ে নিঃশব্দে খেতে হবে। এটাই নিয়মানুবর্তিতা। নেশার বস্তু তথা তমোগুণী পদার্থের সেবন আদৌ করবে না।
*৫) সঙ্গদোষের দোষ দূরীকরণ :*
যেমন সঙ্গ তেমন রঙ্গ। সর্বদা বাবার সঙ্গে অর্থাৎ স্মরণে যোগযুক্ত থাকতে পারলেই উচ্চ পদের অধিকারী হবে।
*৬) দৈবী গুণের ধারণা :*
দৈবীগুণই হলো জীবনের প্রকৃত শৃঙ্গার। দৈবীগুণের ধারণাকে ধারণ করাই হলো প্রকৃত ধর্ম। নম্রতা, হর্ষিতমুখতা, সহনশীলতা, মধুরতা, সহযোগের ভাবনা, সকলের প্রতি শুভ চিন্তন ইত্যাদি। সিনেমা দেখা, টিভি সিরিয়াল দেখা, খবর দেখা, যে সব বিষয় আমাদের নিয়মে নেই, বুদ্ধি যেন সেদিকে কখনও না যায়।
*৭) ঈশ্বরীয় সেবা :*
ঈশ্বরীয় সেবাই বি কে ব্রাহ্মণদের দিব্য তথা শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। সারা দিনের মধ্যে কিছুটা সময় ঈশ্বরীয় সেবার কার্য্যে দিতে হয়, যেভাবেই হোক। তা কোনও আত্মাকে সহযোগ দেওয়া অথবা কাউকে জ্ঞান দান করা কিংবা সেবাকেন্দ্রের কোনও সেবা করার মাধ্যমেই হোক। বি কে দের ধর্মই হল সেবা করা। এই সেবা তিন ধরনের হয়ে থাকে, যথা- মনসা, বাচা (বাণী) আর কর্মণা।
*৮) স্বেত-বস্ত্র ধারণ করা*
সর্বদা স্বেত বস্ত্রই ধারণ করবে। নেহাৎ যদি রঙিন কাপড়ই হয় তো সেটা যেন হালকা রঙের হয় এবং বস্ত্রটির দ্বারা যেন সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা থাকে।
*৯) নিবৃত্তির পরে স্নান :*
সকাল-সন্ধ্যায় স্নান করা ছাড়াও নিবৃত্তি পশ্চাৎ স্নান করা এবং বস্ত্রের বদল করা উচিত- এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকাল বা সন্ধ্যা অথবা যে কোনও সময়েই শৌচালয়ে (টয়লেট) যাই না কেন, কাপড় বদলে, স্নান করে, শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করবো আমরা। যেহেতু এটাই রীতি। তাই এই নিয়ম পালন করা অবশ্যই জরুরী। এছাড়াও যতদূর সম্ভব, যেহেতু আমরা বাবার সন্তান আর ঘরের অন্যান্য সদস্যরা যদি বাবার সন্তান না হয়, তা হলে আমাদের সব জিনিস যদি একটু আলাদা রাখা যায় তো খুব ভালো হয়। একসাথে থাকো, কিন্তু ছোট ছোট জিনিস যেমন শোবার ঘর, স্নান করার সাবান, বালতি ইত্যাদি আলাদা থাকাই ভালো। কারণ যত পরিস্কার-পরিছন্ন থাকবে, ততই ভালো। যদিও সব জায়গাতে এসব করা সম্ভব হয় না, তবুও মনে রাখতে হবে এগুলো হলো নিয়ম-শৃঙ্খলা। আমাদের ব্যবহারের জিনিসপত্র যেন অপরের ব্যবহৃত না হয়।
*১০) চার্ট লেখা :*
চার্ট লেখাই হলো উন্নতির প্রথম সোপানের সাধনা।
*১১) প্রায়শ্চিত পত্র লেখা :*
ঈশ্বরীয় নিয়মের বিরুদ্ধে যদি কোন ভুল হয়ে যায়, তা হলে নিজেই বাপদাদাকে অথবা নিমিত্ত বড় দিদিকে প্রায়শ্চিত পত্র লিখে পাঠালে বিকর্মের খাতা কম হয় এবং সেই ভুলও আর পুণঃর্বার (রিপিট) হবে না। তবে তা না পাঠাতে পারার স্থিতিতে থাকলে, বাবার সামনে বাবাকে হাজির নাজির মেনে তা লিখে বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে তারপর তা ছিঁড়ে ফেলে দিতে পারো।
*১২)* মধুবন তথা সেবাকেন্দ্রের ইনচার্জ ব্রাহ্মণীদের এই অধিকার আছে যে, কোনো ভাই বা বোন যদি বিকারগ্রস্ত হয়ে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে, তা হলে তাদেরকে মধুবন তথা সেবাকেন্দ্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার।
*১৩)* সেন্টারে প্রবেশকারী ভাই-বোন নিজের উন্নতির জন্যই এই জ্ঞান তথা রাজযোগের পাঠ পড়তে আসে। অতএব সেন্টারে কোনও রকমের স্থূল পয়সা-কড়ি ইত্যাদির লেন-দেন তথা ব্যবসা-বানিজ্য বা কোনও প্রকার ধান্ধার কথাবার্ত্তা বলা যাবে না।
*১৪)* যে কোনও সেন্টারের বিদ্যার্থী যদি অন্য শহরের সেবা কেন্দ্রে যায়, তাহলে নিজের টিচারের থেকে অনুমতি পত্র নিয়ে তবেই সে যাবে।
*১৫)* যেকোনো পবিত্র ঈশ্বরীয় বিদ্যার্থী কম করে পুরো আটমাস দৈবী-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার পরেই মধুবনের মতন তপস্যা ভূমিতে, তবেই যেতে পারবে।
*১৬) সন্ধ্যার নুমাশাম যোগ* :
যদি সময় পাওয়া সম্ভব হয়, তবে রোজ সন্ধ্যা ৬:৩০ থেকে ৭:৩০টা অবধি যোগ করুন। সমগ্র বিশ্বকে নিজের শক্তির ভাইব্রেশন ছড়িয়ে দিন।
*১৭)* সারাদিন কেবলমাত্র বাবার 'অব্যক্ত-বাণীর' অধ্যায়ন, মনন এবং চিন্তন করা অতি আবশ্যক। যেমন কারও অসুস্থতার সময় তাকে সুস্থ করার জন্য ঔষধ দেওয়া হয়, ঠিক তেমনই আমাদেরও প্রতিদিন জ্ঞানের ক্লাস শোনা এবং পাঠ পড়া, প্রতিদিনের দিনচর্চা এমন হওয়া অতি আবশ্যক।
*১৮)* জ্ঞানের সাথেই প্রতিদিনের দিনচর্চায় ব্যবহারিক গুণের ধারণা থাকা অতি আবশ্যক। যেমন অপরের প্রতি শুভ কামনা, শুভ ভাবনা দেওয়া, অপরের কথাকে সহ্য করা এবং তাদের প্রতি শুভ ব্যবহার ও শুভ সংকল্প করাও অবশ্যিক কর্তব্য।
*১৯) দিনে পাঁচবার ট্রাফিক কন্ট্রোলের অভ্যাস করা ।*
সকাল- ৭:০০, সকাল-১০:৩০, দুপুর- ১২:০০, বিকেল-৫:৩০ ও সন্ধ্যা-৭:৩০.
*২০)* সকালে যে কোনও সময়েই মুরলীর থেকে যে কোনও একটা স্বমান নিয়ে তা লিখে অভ্যাস কর।
*২১) বলা হয়ে থাকে, যত কায়দা - তত ফায়দা।*
যে কারণে বলা হয় যে, পয়সা-কড়ির লেন-দেন পরস্পরের মধ্যে না হওয়াই ভালো, সেটা সেন্টার হোক অথবা বাইরে কোথাও, যে সব বি কে ভাই-বোনরা আছে, তারা এক্ষেত্রে সবার আগে সেন্টারে যিনি নিমিত্ত আছেন, তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
লৌকিকে থেকেও অলৌকিকতার অনুভব করবে :
*-সুস্থ এবং সাকারাত্মাক চিন্তন*
*-কম কথা, মিষ্টি ভাবে ও ধীরে বলা*
*-পবিত্র দৃষ্টি*
*-সযত্নে পরমাত্মার স্মরণে থেকে কাজ করা*
*-ঈশ্বরের স্মরণে সাত্ত্বিক এবং গভীর নিদ্রায়*
*২২) ঈশ্বরীয় স্মরণে সাত্ত্বিক গভীর নিদ্রায় :-
শোবার আগে জ্ঞানের কিছু ভাল পয়েন্টস্ পড়ে তার উপরেই মনন চিন্তন করবে। তারপর প্রাণের থেকে প্রিয় পরমপিতা পরমাত্মা শিববাবার কোলে ওঁনাকে স্মরণ করতে করতে শুয়ে পরবে। রাত ৯:৩০ থেকে ১০:০০-টার মধ্যে। সারাদিনের বর্ণনাপত্র (পোতামেল) বাবাকে সঁপে দিয়ে হালকা হয়ে শুয়ে পড়বে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন