মকর সংক্রান্তির তাৎপর্য - Rajyoga BD

🌟 মকর সংক্রান্তির তাৎপর্য 🌟

মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি বছর লাখ লাখ পুণ্যার্থী বিভিন্ন নদীর সঙ্গমে যায় পুণ্য স্নান করতে l এই শুভ দিনে মানুষ তিল দানের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক জিনিসও দান করে থাকে l বাস্তবে এই স্থূল পরম্পরার ভিতরে এক আধ্যাত্মিক রহস্য লুকিয়ে আছে l

এখন কলিযুগের অন্তিম সময় চলছে l সমগ্র মানব জাতি এখন দুঃখী আর অশান্ত l তারা নানাভাবে বিদ্ধস্ত l প্রত্যেকেই এই দুঃখের পৃথিবীর পরিবর্তন চাইছে l এমন এক সময় বিশ্ব সৃষ্টিকর্তা পরমাত্মা শিব কলিযুগ আর সত্যযুগের সন্ধিকাল অর্থাৎ এই সঙ্গম যুগে ব্রহ্মার শরীরে অবতরিত হয়েছেন।

ভক্তিমার্গের পুরুষোত্তম মাসে দান - পূণ্যের অনেক মহত্ব মনে করা হয়, ঠিক তেমনই এই পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগে, জ্ঞান স্নান করে নিজেদের খারাপ গুণের দান করলে, প্রতি আত্মা উত্তম পুরুষ হতে পারে l এইদিন মানুষ তিল দান করে, এর অর্থ হলো, আমাদের সংস্কারে যে আসুরী গুণ মিলে গেছে, তার দান করে শুদ্ধ বা দিব্য সংস্কার ধারণ করা l প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ঈর্ষা - দ্বেষ - হিংসা এমন আরো অনেক কু সংস্কার যে মিশে গেছে, সেই সংস্কারের দান আর সু সংস্কার বা দিব্য সংস্কার গ্রহণ l পরমাত্মার আজ্ঞা হলো আমাদের মধ্যে তিলমাত্র খারাপ অভ্যাসের দান করে দিয়ে দিব্য গুণে সমৃদ্ধ করতে হবে নিজেদের l দিতে হবে তিলাঞ্জলী l যেমন মানুষ গঙ্গাস্নান নিজে করে, অন্যকেও করিয়ে খুশী হয় এই ভাবনায় যে এতে তারা শুদ্ধ হবে, পবিত্র হবে l তেমনই এখন শিববাবা আমাদের বলছেন ---- এই পবিত্রতা আসবে একমাত্র জ্ঞান গঙ্গায় স্নান করলে, নিজেরা পাবো জীবনমুক্তি, অন্যদেরও দেখাবো মুক্তি আর জীবনমুক্তির পথ l যেমন নবান্ন বা নতুন ফসল উৎপন্ন হলে মানুষ খুশী হয়, উৎসব পালন করে, তেমন আমরা প্রকৃত অবিনাশী খুশী তখনই অর্জন করবো, যদি আমরা আমাদের ভিতরে থাকা খারাপ স্বভাবকে বর্জন করতে পারি l এই ফসল কাটার সময় বাংলা মাস হিসেবে পৌষ মাসের অন্তিম দিনকে মনে করা হয় l যা ইংরাজী মাস হিসাবে ১৪ ই জানুয়ারী হয়ে থাকে l এই সময় রাশিগত পরিবর্তনও হয়ে থাকে l তাই একে সংক্রমণ কালও বলা হয় অর্থাৎ এক দশা থেকে অন্য দশায় যাওয়ার সময় l এই সংক্রমণ কাল হলো সেই মহান সময়ের স্মরণ যা কলিযুগের অন্তিমে এবং সত্যযুগের আরম্ভের মাঝে ঘটে থাকে l এই সংক্রমণ কালে জ্ঞান সূর্য পরমাত্মাও রাশি পরিবর্তন করেন l তিনি পরমধাম ছেড়ে সাকার দুনিয়ায় অবতরিত হন l সংসারের ক্রান্তির পিছনে এক উদ্দেশ্য থাকে --- যা পরিবর্তনের l এই পরিবর্তন সাময়িক l মানুষ এখন সম্পূর্ণ পরিবর্তন চাইছে l সত্যযুগের খুশীর আধার হলো এখনকার সংস্কারের পরিবর্তন l এই ক্রান্তির পরে সৃষ্টিতে আর কোনো ক্রান্তিবা বা পরিবর্তনই হয় নি l সংক্রান্তির এই উৎসব হলো সঙ্গম যুগে ঘটে যাওয়া সেই মহান ক্রান্তি বা পরিবর্তনকে স্মরণ l

স্নান -- ব্রাহ্ম মুহূর্তের স্নান হলো সেই জ্ঞান স্নানের স্মরণ l

তিল ভোজন -- তিল ভোজন, অন্যকে দানেরও এক রহস্য আছে l বাস্তবে খুব ছোটো ছোটো জিনিসের তুলনা তিলের সঙ্গে করা হয় l আত্মাও অতি সূক্ষ্ম l অর্থাৎ তিল হলো আত্মা স্বরূপে স্থিত হওয়ার স্মরণ l

তিলের লাড্ডু খাওয়া -- তিল আলাদা করে খেলে তেতো লাগে l অর্থাৎ একা থাকার অর্থ ভারী ভাবের অনুভব হওয়া l আর লাড্ডু হলো একত্রিত এবং মিষ্টতার প্রতীক l

তিল দান -- দান করলে ভাগ্যের পরিবর্তন হয় l তাই বর্তমানের এই সঙ্গম যুগে পরমাত্মাকে নিজের ছোটো ছোটো দুর্বলতার দান করতে হবে l সৌভাগ্যের সূর্যের উদয় করতে হবে l

আগুন জ্বালানো -- আগুন সমস্ত জিনিসকে শুদ্ধ এবং পরিবর্তন করে l সন্ন্যাসী এবং যোগীরা যজ্ঞের আগুন প্রজ্জ্বলিত করে ঈশ্বরের আহ্বান করে, স্মরণ করে ঈশ্বরের, এতে কেবল তাদেরই জন্ম - জন্মান্তরের বিকর্ম ভস্ম হয় না তার সঙ্গে তাদের এই স্মরণের কিরণ সমগ্র বিশ্বকে শুদ্ধ করে শান্তি, পবিত্রতা, আনন্দ, প্রেম এবং শক্তির তরঙ্গ ছড়িয়ে দেয় l

আমরা যদি এই পর্বকে নিম্নলিখিত বিধির দ্বারা পালন করি তাহলে আমরাই কেবল প্রকৃত সুখের প্রাপ্তি করব না, সমগ্র বিশ্বকে দিতে পারব সুখের দান, হতে পারব পরমাত্মার আশীর্বাদের অধিকারী l

❤💛 আপনাদের সবাইকে জানাই মকর সংক্রান্তির শুভকামনা, জানাই পৌষ পার্বণের আন্তরিক শুভেচ্ছা l ঘরে ঘরে আনন্দের উৎসব হতে থাকুক l পবিত্র, শুদ্ধ হোক জগৎবাসী l 🙏
. !! ওম্ শান্তি !!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন