*কুম্ভ-মেলার রহস্য ও আধ্যাত্মিক অর্থ :-*
কুম্ভ-মেলার কথা আমরা শুনে থাকি। বস্তুগত ভাবে কুম্ভ কথার অর্থ *কলস*! কিন্তু এর যে আধ্যাত্মিক রহস্য যেমন অর্থবহ তোমনই সুন্দর !
পৌরাণিক কাহিনীগুলি থেকে আমরা জানতে পারি : সমুদ্র মন্থনের সময় দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যে 'অমৃত কলস' নিয়ে কাড়াকাড়িতে এক প্রচন্ড অস্থিরতা তৈরী হয়েছিল, কারা সেই অমৃত পান করবে - এই নিয়ে। এমত অবস্থায় নারায়ণ এক সুন্দরী রমণীর রূপ ধারণ করে উভয় পক্ষকেই শান্ত করার প্রয়াস করেন। নারায়ণের সেই মোহিনী রূপে আকৃষ্ট হয়ে, দেবতা ও অসুর দুই পক্ষই তা মেনে নেন। সেই সুযোগ নারায়ণের বাহন গরুড় সেই অমৃত কলস নিয়ে পালাবার সময় কলস থেকে চার ফোটা অমৃত পৃথিবীর চার স্থানে ছলকে পড়ে। যে চার জায়গাতে বর্তমানে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ণকুম্ভ - হরিদ্বার ও নাসিকে, অর্দ্ধকুম্ভ-উজ্জ্বয়িনি ও এলাহাবাদের প্রয়াগে।
*পৃথিবীর বৃহত্তম শান্তিপূর্ণ এই মিলন সমাবেশে উপস্থিত হয়ে আত্মারা নদীতে বা সাগরে স্নানাদি করে পবিত্র হওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু অমৃত পান করে কোথায়* ???
বাস্তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এই অমৃত পান করতে পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তো পবিত্র হতে পারছে না। অথচ সাধু-সন্ন্যাসী থেকে সাধারণ মনুষ্য আত্মা এই বিশেষ সময়ে সেখানে যায় স্নানের মাধ্যমে পবিত্র হতে। *কিন্তু হায়, অমৃতের স্বাদ থেকে বঞ্চিতই থেকে যায় তারা*।
*এই বঞ্চিত থাকার মূল কারণ তাদের মধ্যে প্রকৃত পবিত্রতার অপূর্ণতা। যেহেতু, তাদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা - স্নানের মাধ্যমেই শুদ্ধ হওয়া যায়। আসলে তা যে জ্ঞান-স্নান, সেই মূল কথাটাই আজ তারা ভুলে গেছে। দ্বাপর থেকেই আত্মার সেই জ্ঞান-নেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, বর্তমানে তা শুধুই বাহ্যিক নিয়মেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে* ।
*অমৃত কি কলস কিসের প্রতীক তা বুঝতে গেলে ভগবান প্রদত্ত জ্ঞান ছাড়া তা জানা সম্ভব নয়। বর্তমানের এই সঙ্গমযুগেই সেই অমৃত পান করার সময়, যখন ভগবান স্বয়ং আসেন এই ধরাতে তার অমৃত-সুধা জ্ঞানের ভাণ্ডার নিয়ে, যার দ্বারা আত্মারা পারে তাদের বুদ্ধিরূপী কলসকে পূর্ণ ও পবিত্র করে সুখ-শান্তিময় জীবনের সন্ধান দিতে! তাই তিনি কতভাবেই রোজ মুরলীরূপী গীত শুনিয়ে মনুষ্য আত্মার অন্তরকে মধুময় করে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। যেহেতু আত্মারা তো সেই পরমাত্মারই সন্তান*।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন