গীতা জ্ঞানের আধ্যাত্মিক রহস্য
. পরমাত্ম - অবতরণ এবং কর্মযোগ
. পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অধ্যায়
🔆 গীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ে ভগবান ধ্যান যোগের বিশেষত্বকে বলতে গিয়ে, যোগ আর তার অভ্যাস আর তার সঠিক বিধিকে স্পষ্ট করেছেন l মনকে কোন্ কোন্ কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়, ধ্যানের দ্বারা পরমাত্মার সঙ্গে মন কিভাবে একাগ্র করবে ইত্যাদি ....ইত্যাদি l হে অর্জুন ! কর্ম করাকালীন কোনো প্রকারের ফলের আশা না রেখে যিনি কর্ম করেন তথা ইন্দ্রিয়জিত হয়ে সমস্ত প্রকার সুখের ভৌতিক পদার্থের ইচ্ছাযুক্ত সংকল্পের ত্যাগ যিনি করতে পারেন, তিনিই প্রকৃত যোগী বা সন্ন্যাসী l যার মন বশীভূত, যিনি প্রসন্নচিত্ত হয়ে স্বয়ং কোনো না কোনো উপযোগী কর্ম করেন, অর্থাৎ সময় কোনো শ্রেষ্ঠ কাজে লাগান তিনিই যোগারূঢ় অর্থাৎ কর্মযোগী l এমন কর্মযোগীই আমাদের হতে হবে l সমস্ত মানুষের আত্মোন্নতি করতে হবে, সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, আমি নিজের আত্মোন্নতিই বা কিভাবে করব l আত্মার অধোগতি কখনোই হতে দেওয়া উচিত নয়, কারণ জীবাত্মা নিজেই নিজের বন্ধু বা শত্রু l
🔆 অর্জুন এরপর ভগবানকে প্রশ্ন করেন, কখন জীবাত্মা নিজেই নিজের ব্ন্ধু বা নিজেই নিজের শত্রুতে পরিণত হয়!
🔆 ভগবান খুব ভালোভাবে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন যে, যখন মন সমেত সমস্ত ইন্দ্রিয়কে জীবাত্মা জয় করতে পারে, তখন সেই জীবাত্মা নিজেই নিজের ব্ন্ধু l অর্থাৎ সেই বিজিত মন জীবাত্মার ব্ন্ধু l আবার যখন এই মন সহিত সমস্ত ইন্দ্রিয় পরবশ অর্থাৎ অন্যের অধীন, কোনো না কোনো খারাপ কাজের অধীন, কখনো কখনো এই মন ঈর্ষা, দ্বেষের অধীন হয়ে পরবশ হয়, তখন এই মন হলো আত্মার শত্রু l যিনি মনকে জয় করেছেন, এমন পুরুষ মান, অপমান, সুখ, দুঃখে, উষ্ণ বা শীতল যে কোনো পরিস্থিতিতেই মনকে শান্ত রেখে পরমাত্মার স্মৃতিতে অন্তর্লীন হতে পারে l সেই যোগী নিজের আধ্যাত্মিক জ্ঞান আর আত্ম - অনুভূতির দ্বারা পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট থাকেন l এমন জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তির দৃষ্টিতে মাটি, পাথর এবং কাঞ্চন সমতুল্য l তিনি ভিন্ন ভিন্ন স্বভাবের ব্যক্তির প্রতিও সম - ব্যবহার করেন l সংযমযুক্ত অপরিগ্রহী যোগী সর্বদা একান্তে থেকে নিজের মনকে বশীভূত করে, নিরন্তর পরমাত্মার স্মরণে বুদ্ধিকে একাগ্র করতে পারেন l
🔆 এরপর ভগবান ধ্যানে যথার্থভাবে বসার বিধি বলেছেন l শান্ত অন্তঃকরণ, ভয়রহিত, ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত যোগীকে পবিত্র একান্ত স্থানে আসন বিছিয়ে, দৃঢ়তাপূর্বক মেরুদন্ডকে সোজা রেখে মন, ইন্দ্রিয় তথা কর্মকে সংযম করে নিরাকার পরমাত্মার সঙ্গে মন, বুদ্ধি এবং দৃষ্টিকে একাগ্র করে হৃদয়ে শুভ ভাবনা রেখে যোগাভ্যাস করতে হবে l এই যোগ যারা শুদ্ধ আহার - বিহার বা কর্ম করেন, বা যারা সন্তুলিত শয়ন, জাগরণ করেন তাদেরই পূর্ণ হওয়া সম্ভব l এই হলো যোগ বা ধ্যানের সঠিক বিধি l ওম্ শান্তি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন