*বাচ্চাদের বকাঝকা করে সমস্ত বিষয়ে বোঝানো, এটা সঠিক লালন পালনের অংশ নয়....*
———— *ব্রহ্মাকুমারী সিস্টার শিবানী*
*যখন আমরা কোন শুকিয়ে যাওয়া গাছকে জল দেওয়া শুরু করি, তখন সেই শুকনো গাছে নতুন পাতার জন্ম হয়। সেই রকমই বাচ্চাদেরও লালন পালন করার সময় তাকে অত্যন্ত ভালোবাসার সাথে বোঝানো দরকার। কেননা যদি নিজের বাচ্চাকে বকাঝকা করে বোঝানো হয়, তাহলে সেই বাচ্চাটি সঠিক পালনা পায় না। ঠিক সেইরকম, যদি আপনি গাছটিকে যত্ন করে জল না দেন, তাহলে সেই গাছটিও ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করে। আজ আমরা আমাদের বাচ্চাদের সঙ্গে কি করছি ? তাকে খাবারও খাওয়াচ্ছি, পড়াশোনাও করাচ্ছি, আবার সাথে সাথে বকাঝকাও করছি, অর্থাৎ আমরা গাছটিকে জল দিচ্ছি আবার সাথে সাথে দুর্ব্যবহার করছি। আপনি যদি চান তবে এটাকে নিয়ে একটা ছোট্ট পরীক্ষাও করতে পারেন..... একটি গাছকে খুব যত্ন করে জল দিন, আর অন্যদিকে অন্য একটি গাছকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও যত্ন সহকারে জল দিন। দুটি গাছের মধ্যে অনেক পার্থক্য নজরে আসবে।*
*এটা আমাদের চিন্তা-ভাবনার প্রভাবে হয়, যেটা আমাদের থেকে গাছ প্রাপ্ত করছে। যখন আমাদের চিন্তা ভাবনার প্রভাব গাছ, পশুপাখি, আর প্রকৃতির উপর পড়তে পারে, তাহলে এর প্রভাব কি আমাদের বাচ্চা, পরিবার আর নিজের উপর পড়বে না ? আপনি সারাদিন দুশ্চিন্তা করলে, সেটা নিজের উপর কতখানি প্রভাব বিস্তার করে, এ বিষয়ে হয়তো আপনি কোনদিন ভাবেন-ই নি....। যএই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার জন্য, নিজের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। অমনোযোগী হয়ে নিজের শরীরকে কতদিন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন ? এইজন্য নিজের প্রতি মনোযোগী হওয়ার দরকার আছে, যাতে নাকারাত্মক চিন্তা আর কথা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। যদি আমার চিন্তা-ভাবনা ভালো না হয়, কারোর প্রতি রাগ, ঘৃণা, ঈর্ষা বা আমি সব সময় নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করি, তাহলে তার কারণ হলো আত্মা ভালো গুণ বা সংস্কার দ্বারা পালিত হয়নি। যখন আমরা কোনো একটি গোলাপ ফুলকে দেখি, তবে আমরা তার রং, কেমন দেখতে, তার সুগন্ধ কেমন, এইসব জিনিস দেখি। এর অর্থ এটাই হল যে, আমি আত্মা, আমার কাছে অনেক ধনসম্পত্তি আছে, আমি অনেক কিছু প্রাপ্ত করে নিয়েছি, কিন্তু আত্মা আধ্যাত্মিক জ্ঞান থেকে শুদ্ধ চিন্তা করার পদ্ধতি এবং তার ফল না গ্রহণ করলে আমার থেকে কোনদিনই ভালো চিন্তা-ভাবনার উৎপত্তি হবে না।*
*যখন আমরা হাসি, তখন বোঝা যায় যে, এই হাসিটা আসল না কৃত্রিম। হাসি যদি কৃত্রিম হয়, তবে তা থেকে ভালো প্রকম্পন (Vibrations) বায়ুমন্ডলে ছড়ায় না। যখন আত্মা সঠিক পুষ্টি না পায়, তখন সে দুর্বল হয়ে পড়ে। আত্মার পুষ্টি আসে সকারাত্মক চিন্তা থেকে, আর সকলের প্রতি শুভ ভাবনা থেকে। যখন এই পুষ্টির অভাব হয়, তখন সে জাগতিক-বিনাশী পদার্থের থেকে ক্ষণিকের জন্য সুখ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। যখন আপনি আন্তরিক শান্তি অনুভব করতে অসমর্থ হবেন, তখনই আপনার ওই সকল ভৌতিক-বিনাশী জিনিসের প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ হবে। যে রকম কোনো দামি জিনিস কিনলে, তার থেকে বেশি সুখ পাওয়া যায়। মনে করুন, আজ আপনার বাড়িতে পার্টি আছে। কোনো গাছ পুষ্টির অভাবে ঝিমিয়ে রয়েছে, আপনি তাকে ভালো যাতে দেখায় তারজন্য বাইরে থেকে কৃত্রিম ফুল, পাতা দিয়ে সাজিয়ে দিলেন, যাতে এর শোভা বৃদ্ধি হয়। আর অন্যদিকে একটা গোলাপ ফুল, যার উপর কোন কৃত্রিমতা নেই, কিন্তু সে তার নিজস্ব সৌন্দর্য আর সুগন্ধের দ্বারা আপনাকে শুধু নয় সকলকেই অত্যধিক আকৃষ্ট করবে। এই পার্থক্য দেখা যায় আমাদের বাস্তবিক আর কৃত্রিমভাবে সাজানো জীবনের মধ্যে। এখন এটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে যে আপনি নিজের জন্য কিরকম জীবন পছন্দ করবেন ? কৃত্রিম সাজ-সজ্জায় সজ্জিত জীবন, নাকি অন্তরের খুশি আর সন্তুষ্টতায় ভরা জীবন....।*